কপোতাক্ষ নদ (মাইকেল মদুসুদন দত্ত)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য কবিতা | - | NCTB BOOK
3.1k
3.1k

সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে !

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;

সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে

শোনে মায়া-মন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে

জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে !

বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,

কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?

দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে ।

 

আর কি হে হবে দেখা? - যত দিন যাবে,

প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে

বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে

বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে

নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে

লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

শেষ ছয় চরণের
প্রথম আট চরণের
মধ্য চরণের
সমস্ত কবিতার শেষ চরণের
নিসর্গপ্রীতির
নদীপ্রেমের
প্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধের
স্মৃতিকাতরতা
ভাবান্তরে স্বদেশে ফিরে আসতে চাইলে
ভাবান্তরে প্রবাসী জীবন একঘেয়ে মনে হলে
ভাবান্তরে জন্মভূমির স্মৃতি উদ্দীপ্ত হলে
ভাবান্তরে জন্মভূমিতে ফিরে এসে মরতে চাইলে

কবি পরিচিতি

359
359

মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনের শেষে তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগ জন্মে। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। তখন তাঁর নামের প্রথমে যোগ হয় 'মাইকেল'। পাশ্চাত্য জীবনযাপনের প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তীব্র আবেগ তাঁকে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যরচনায় উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে জীবনের বিচিত্র কষ্টকর অভিজ্ঞতায় তাঁর এই ভুল ভেঙেছিল । বাংলা ভাষায় কাব্যরচনার মধ্য দিয়ে তাঁর কবিপ্রতিভার যথার্থ স্ফূর্তি ঘটে। তাঁর অমর কীর্তি 'মেঘনাদ বধ কাব্য'। তাঁর অন্যান্য কাব্য : তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য ও চতুর্দশপদী কবিতাবলী। তাঁর নাটক : কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী; এবং প্রহসন : একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ এবং সনেট প্রবর্তন করে তিনি যোগ করেছেন নতুন মাত্রা । ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জুন কবি পরলোকগমন করেন । 

common.content_added_by

শব্দার্থ ও টিকা

311
311

 সতত-সর্বদা। বিরলে-একান্ত নিরিবিলিতে। নিশা-রাত্রি। ভ্রান্তি-ভুল। বারি-রূপকর- প্রজা যেমন রাজাকে কর বা রাজস্ব দেয়, তেমনি কপোতাক্ষ নদও সাগরকে জলরূপ কর বা রাজস্ব দিচ্ছে। চতুর্দশপদী কবিতা- ইংরেজিতে Sonnet, বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা। চৌদ্দ-চরণ- সমন্বিত ভাবসংহত সুনির্দিষ্ট। চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণের স্তবককে অষ্টক (Octave) এবং পরবর্তী ছয় চরণের স্তবককে ষষ্টক (Sestet) বলে। অষ্টকে মূলত ভাবের প্রবর্তনা এবং ষটক ভাবের পরিণতি থাকে । চতুর্দশপদী কবিতায় কয়েক প্রকার অন্ত্যমিল প্রচলিত আছে। যেমন, প্রথম আট চরণ : কখখক কখখক। শেষ ছয় চরণ : ঘঙচ ঘঙচ । অথবা প্রথম আট চরণ : কখখগ কখখগ, শেষ ছয় চরণ : ঘঙঘঙ চচ। ‘কপোতাক্ষ নদ' একটি চতুর্দশপদী কবিতা। এখানে মিলবিন্যাস : কখকখ কখখক গখগ ঘগঘ ৷

common.content_added_by

পাঠ পরিচিতি

324
324

 ‘কপোতাক্ষ নদ' কবিতাটি কবির চতুর্দশপদী কবিতাবলী থেকে গৃহীত হয়েছে। এই কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। কবি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মধুসূদন এই নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। যখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন, তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। দূরে বসেও তিনি যেন কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান। কত দেশে কত নদ-নদী তিনি দেখেছেন, কিন্তু জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছে, কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না। কবির মনে সন্দেহ জাগে, আর কি তিনি এই নদের দেখা পাবেন ! কপোতাক্ষ নদের কাছে তাঁর সবিনয় মিনতি-বন্ধুভাবে তাকে তিনি স্নেহাদরে যেমন স্মরণ করেন, কপোতাক্ষও যেন একই প্রেমভাবে তাঁকে সস্নেহে স্মরণ করে । কপোতাক্ষ নদ যেন তার স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীদের নিকট ব্যক্ত করে । দেশমাতৃকার প্রতি অকুণ্ঠ প্রেম যে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি কবিতায় তাই ধরা পড়েছে।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion